আকেল (জ্ঞানী) লোকের পরিচয়
আকেল (জ্ঞানী) লোকের পরিচয় হাজারাতে মুহাক্কিকীনে ওলামা ও মাশায়েখে তরীকত বলেছেন, সত্যিকার জ্ঞানী ঐ ব্যক্তি যিনি শরীয়তের আলোকে মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য এবং তার থেকে কি খেদমত ও ব্যবহার উদ্দেশ্য তা সে বুঝতে ও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার দ্বারা যে উদ্দেশ্য এবং বান্দা থেকে যে কাজ ও আচরণ উদ্দেশ্য উহা মোট ৪টি। (১) নিয়ামত (অনুগ্রহ) (২) বালিয়্যত (বিপদ-অভিশাপ) (৩) আনুগত্য ও ইবাদত ও (8) নাফরমানী ও পাপাচার ।
তুমি যদি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামতের অধিকারী হও তাহলে আল্লাহ পাক তোমার থেকে শরীয়তানুযায়ী উহার যথার্থ শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার ব্যবহার চাইবেন। পক্ষান্তরে, তুমি যদি বিপদাপদ ও অভাব অনটনের শিকার হও তাহলে মহান আল্লাহ তোমার থেকে দৈর্ঘ্য ও সহনশীলতার আচরণ তলব করবেন। যখন তুমি তাঁর আনুগত্য ও ইবাদতের মধ্যে নিমগ্ন থাক তাহলে তিনি তোমার থেকে শরীয়তানুযায়ী তার অনুগ্রহ ও অনুকম্পার স্বাক্ষ্য দান তলব করবেন।
আর যদি নাফরমানী ও পাপাচারের মধ্যে নিমগ্ন থাক তাহলে শরীয়তানুযায়ী তিনি তোমার থেকে তওবা ও সংশোধন তলব করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে উক্ত চারটি বিষয় উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং শরীয়ত অনুযায়ী তাঁর পছন্দনীয় তরীকা ও আদর্শের নিকটবর্তী হবে সে-ই প্রকৃত বান্দা হিসেবে গণ্য।
হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তিকে নিয়ামত দেয়া হলো এবং সে উহার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো, বিপদাপদের শিকার হলো সে উহাতে ধৈর্য্য অবলম্বন করলো, অত্যাচার ও নাফরমানী করে ক্ষমা প্রার্থনা করলো অতঃপর তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো- একথা বলার পর হজরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ থাকলেন, এতে সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ ঐ ব্যক্তির জন্য কি রয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, ঐ সব লোকের জন্য রয়েছে শান্তি, নিরাপত্তা এবং তারাই সঠিক পথ প্রাপ্ত।
আল্লামা শাজুলী (রহঃ) বলেছেন, জ্ঞানী ঐ ব্যক্তি, যে মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছে, তাঁর নিয়ামতরাজির মধ্যে চিন্তা গবেষণা করে তাঁর স্মরণে লিপ্ত হয়ে গেছে এবং তাঁরই দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা, তারই মুখাপেক্ষী হওয়া, তারই নিকট ভিক্ষা চাওয়া ও তারই পথে সুদৃঢ় থাকার দাবী ও আহবান করার পথ খুলে দেয়া হয়েছে, অতঃপর মহান আল্লাহ তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছেন। (এব্যক্তিই সত্যিকারের জ্ঞানী) সুতরাং মহান আল্লাহর বাণী- এ দ্বারা তাঁর বান্দাকে কি নিয়ামত দেয়ার ইচ্ছা করেছেন- এ’কথার ইলম কারোর নেই।
তিনি (আল্লামা শাজুলী) আরো বলেছেন, মহান আল্লাহর নিকট জ্ঞানী ঐ ব্যক্তি, যে তার দুর্দিন ও বিপদাপদের সময় তার উপর আল্লাহ পাক প্রদত্ত চলমান ও বিদ্যমান অনুগ্রহ সমূহের পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাঁর প্রতি আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ প্রদানের দরুন তার নফসকে বিষণ্ন ও বিমর্ষ করার বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।
অতএব, হে আল্লাহর পথের অভিসারীগণ! তোমরা মহান আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ কর। আশা করা যায় যে, তোমরা সফলকাম হবে।