আবু বকরের অবদান
আবুবকরের খেলাফত মাত্র দুই বছর তিন মাস কাল স্থায়ী ছিল। এই অল্প পরিসর সময়ের মধ্যে তিনি ইসলামকে ও মুসলিম জাতিকে যেসব অমূল্য সম্পদ দিয়ে গেছেন তারা তুলনা হয় না । আবুবকর না থাকলে বসুলুল্লাহর ইন্তেকালের সাথে সাথে ইসলামেরও অবসান ঘটত। কেউ কেউ এরকম মন্তব্য করেছিলেন। এই মন্তব্য যে একেবারে ভিত্তিহীন তা বলা যায় না। রসুলুল্লাহ যেদিন ইন্তেকাল করলেন সেদিনকার পরিস্থিতি সত্যই ভয়াবহ ছিল । চারদিক থেকে বিদ্রোহীরা মাথা তুলে দাঁড়াল। আরবের সব জায়গায় আর জাহেলিয়াতের অন্ধকার নেমে এল। চারজন ভণ্ড নবীর আবির্ভাব ও তাদের বিকৃত ধর্মমত ইসলামকে আরও বিপন্ন করে তুলল। নামাজ, রােজা, হজ্ব, যাকাত-ইসলামের সৰ নৈতিক বিধিনিষেধ অস্বীকার করে তারা অনাচার ও ব্যভিচারে আবার দেশ ছেয়ে দিল। সমগ্র আরব তাে বিদ্রোহী হয়ে উঠলই এমন কি রােমক ও পারসিকরাও বিপুল শক্তি নিয়ে ইসলামকে নির্মূল করার জন্য
উদ্যত হলাে। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আবুবকর অসাধ্য সাধন করলেন। ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী সম্প্রদায়দের বিরুদ্ধে, রােমান ও পারসিক শক্তিদ্বয়ের বিরুদ্ধে, সব সীমান্তে তিনি অভিযান চালালেন।
মহাবীর খালিদ ধর্মদ্রোহীদেরকে একরকম নির্মূল করে দিলেন। চারজন ভণ্ড নবীর মধ্যে আসওয়াদ আনসি ও মুসায়লামা যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করল, সাজাহ ও তােলায়হা ইসলামে ফিরে এল । তাদের ভক্তবৃন্দ হয় যুদ্ধে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, না হয়তাে সন্ধি করে খলিফার বশ্যতা স্বীকার করল । যাকাত অস্বীকারকারীরা যাকাত ও রাজকর দিতে শুরু করল। বিদ্রোহী পরিবারগুলাে পরাজিত হয়ে
পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করল । এভাবে হযরত আবুবকর দ্বিতীয়বারের মতাে সমগ্র আরব দেশ জয় করে ইসলামের ভিত্তিভূমিকে সুদৃঢ় করলেন। শুধু তাই নয়, খণ্ড খণ্ড গােত্রীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে তিনি একটি প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করলেন। বলা বাহুল্য, এই নতুন শাসনতন্ত্র ছিল তাঁর যুগের অনেক পূর্বগামী। আরব আর এখন আপন সীমানার মধ্যে আবদ্ধ রইল না। সিরিয়া, ইরাক এবং পারস্য যখন বিজিত হলো তখন সমগ্র জগৎ বিস্ময়ে চেয়ে দেখল আরবের মরুভূমিতে এক নতুন
বিশ্বশক্তির আবির্ভাব হয়েছে ইসলামের এই মহাগৌরবের মূলে রয়েছেন প্রথম খলিফা হযরত আবুবরক।