বাগদাদে শিক্ষা আরম্ভ
বাগদাদে শিক্ষা আরম্ভ হযরত বড় পীর সাহেব দীর্ঘদিন পদব্রজে ভ্রমণ করিয়া বহু দুঃখকষ্ট সহ্য করিয়া
বাগদাদে আসিয়া পৌছিলেন। পূর্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে যে, বাগদাদই ছিল তখনকার দিনে ইসলামী জ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা লাভের সর্বপ্রধান কেন্দ্রস্থল। মুসলিম সভ্যতার চরম বিকাশের সময় হইতে বাগদাদ সমগ্র বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা কেন্দ্ররূপে গড়িয়া উঠিয়াছিল।
শুধু ইসলামী শিক্ষাই নহে, বরং কুরআন, হাদীস, ফেকাহ, ইলমে মারেফাত, সাহিত্য, কাব্য, ইতিহাস, ভূগােল, দর্শন, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, হেকিমী ও ইউনানী প্রভৃতি চিকিত্সা বিদ্যা ইত্যাদি সর্ববিদ্যা শিক্ষারই প্রাণকেন্দ্র ছিল তখন বাগদাদ নগরী।
বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা
একদিকে দেশবিদেশ হইতে অগণিত ছাত্র বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় বাগদাদে আসিয়া ভীড় জমাইত। অপরদিকে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ হইতে সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকগণের আগমন ঘটিত এই বাগদাদ নগরীতেই। নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় যদিও বাগদাদ তকালে সর্বপ্রকার বিদ্যায় উচ্চশিক্ষা লাভের একমাত্র কেন্দ্রস্থল ছিল, তথাপি একমাত্র নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত সমগ্র বাগদাদে আর এমন কোন
দ্বিতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না, যেখানে কোন ছাত্র নিজের ইচ্ছামত যে কোন একাধিক বিষয়ে শিক্ষা লাভ করিতে পারে। অথচ নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এত অধিক সংখ্যক ছাত্রের আসন ছিল না যে, সেখানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ হইতে আগত অসংখ্য ছাত্রের সকলেই ভর্তি হইয়া শিক্ষা লাভ করার সুযােগ পাইতে পারে। সেখানে নির্দিষ্ট আসন পূর্ণ হইয়া গেলে শত চেষ্টা করিয়াও আর কেহ ভর্তি হইতে পারিত না।
তবে এই অসুবিধা দূর করার জন্য তকালে বাগদাদে আর একটা শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। বড় বড় পন্ডিতগণের প্রত্যেকেরই এক একটা নিজস্ব পরিচালনাধীন মাদ্রাসা ছিল। এই সব মাদ্রাসার এক একটাতে মাত্র একটি বিশেষ বিষয়ই শিক্ষা দান করা হইত।
অর্থাৎ, যিনি যে বিষয়ে সর্বাপেক্ষা অধিক জ্ঞান রাখিতেন, তিনি একটা মাদ্রাসা খুলিয়া ছাত্রদিগকে শুধু সেই একটা মাত্র বিষয়েই শিক্ষাদান করিতেন। যেমন কোন মাদ্রাসায় শুধু বিশুদ্ধরূপে কোরআন পাঠ, কোন মাদ্রাসায় কুরআন শরীফ হেফজ করা, কোন মাদ্রাসায় কুরআন শরীফের তফসীর, কোন মাদ্রাসায় শুধু হাদীসের ব্যাখ্যা, কোন মাদ্রাসায় শুধু ফেকাহ, কোন মাদ্রাসায় শুধু ইলমে মারেফাত ইত্যাদি যে কোন একটি বিষয়ে শিক্ষা দান করা হইত।
এইজন্য বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভে ইচ্ছুক যে কোন জ্ঞানপিপাসুদেরকে এক মাদ্রাসায় একটি বিষয় শিক্ষা লাভের পর অন্য মাদ্রাসায় ভর্তি হইয়া অন্য আর একটি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করিতে হইত। বিশেষ আগ্রহী ও মেধাবী ছাত্রগণ একই সময়ে দুই বা তিনটি মাদ্রাসায় ভর্তি হইয়া বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা লাভ করিতেন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
হযরত বড় পীর সাহেব বাগদাদে উপস্থিত হইয়া প্রথমেই নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইয়া শিক্ষা লাভ করার সুযােগ পাইলেন। তাহা সত্ত্বেও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও বহু ওস্তাদের নিকট যাইয়া তাঁহাকে বিভিন্ন বিষয় শিখিতে হইয়াছিল। একদিকে তাঁহার স্মরণশক্তি ছিল অসাধারণ, অন্যদিকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহ ছিল তাঁহার অদম্য নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি আরও বহু ওস্তাদের নিকট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করিয়া তকালে প্রচলিত সর্বপ্রকার বিদ্যায় তিনি প্রভূত বুৎপত্তি অর্জন। করিয়াছিলেন। পরবর্তীকালে হযরত বড় পীর সাহেব নিজামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া উক্ত বিদ্যালয়েই কিছু দিন কয়েকটি বিষয়ে অধ্যাপনাও করিয়াছিলেন।
তিনি যেসকল আলেমের নিকট শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে নিম্নবর্ণিত কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। যথা- আবু সাইদ মুরারক ইবনে মুকাররমী, আবু ওফা আলা ইবনে আকীল, আবু গালেব আহমাদ, আবুল কাশেম আলী, আবু জাকারিয়া ইবনে ইয়াহ ইয়া তাবরেজী।