মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য

0
1390
মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য
মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য

মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য

মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য কারাে মতে, নবুয়্যতের দাবীর আলােকে পার্থক্য করা যাবে। অর্থাৎ নবী থেকে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেলে উহা মুজিযা হিসেবে গণ্য হবে এবং গায়রে নবী থেকে প্রকাশ পেলে উহা কারামত নামে অভিহিত হবে । কাজী আবু বকর (রহঃ) এ মতকেই পছন্দ করেছেন এবং এ মতই নির্ভরযােগ্য। 

কারাে মতে, নিশ্চয়তা ও অনিশ্চয়তার দ্বারা পার্থক্য সৃষ্টি হবে। সুতরাং নবী তার থেকে প্রকাশিত আশ্চর্য ঘটনাকে নিশ্চিত ভাবে মুজিযা হিসেবে ঘােষণা করতে পারেন । কিন্তু অলী থেকে ঐ ধরণের অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেলে তিনি নিশ্চিত ভাবে উহার সত্যতার দাবী করতে পারবেন না। কেননা, তার থেকে প্রকাশিত ঘটনা ধােকাও হতে পারে ।

কারাে মতে, অস্বাভাবিক ও অলৌকিক কোন ঘটনা যদি এমন লােকের পক্ষ হতে প্রকাশ পায় যার মধ্যে ঈমান ও আমলে ছালেহ নেই তাহলে উহা মুজিযা ও কারামত নামে অভিহিত হবে না বরং উহা ইস্তেদরাজ হিসেবে গণ্য হবে। তবে তার মধ্যে যদি ঈমান ও আমলে ছালেহ থাকে এমতাবস্থায় তিনি নবী হলে প্রকাশিত ঘটনা মুজিযা এবং নবী না হলে উহা কারামত নামে অভিহিত হবে । 

আল্লামা সহল বিন আব্দুল্লাহ তসরী রহঃ) বলেন, মুজ্যিা হলাে নবীদের এবং কারামত হলাে অলীদের, মউনত হলাে মুরীদীনের আর তামাকুন হলাে বিশেষ নেক্কার বান্দাদের। আবু আলী রােজবারী (রহঃ) বলেন, আল্লাহ পাক নবীদের প্রতি মুজিযা প্রকাশ করে দেয়া ফরজ করে দিয়েছেন, পক্ষান্তরে অলীদের প্রতি তাদের কারামত গােপন করা ফরজ করে দিয়েছেন যাতে করে মানুষ তদ্বারা ফেত্না ও সমস্যার সম্মুখীন না হয়।

 কথিত আছে যে, নবীগণের শাস্তি হলাে তাদের থেকে অহী বন্ধ করে দেয়া এবং মিনহাজুল ওয়াসূল বা আল্লাহ প্রাপ্তির পথ – ১৮৫ কাদের শাস্তি হলাে তাদের কারামত প্রকাশ করে দেয়া ও মুরীদগণের শাস্তি

হলাে ইবাদত-বন্দেগতে ত্রুটি-বিচ্যুতি সৃষ্টি করা। অতঃপর কারামতের প্রকাশ কোন কোন সময় অলীদের ইচ্ছায় হয়ে থাকে, অনেক সময় তাদের অনিচ্ছাতেও হয়ে থাকে ।

মুজিযা ও কারামতের মধ্যে পার্থক্য

জানা উচিত যে, অলীগণের মাকাম ও মর্যাদা যেখানে শেষ, সেখান থেকে নবীগণের মাকাম বা মর্যাদা আরম্ভ । সুতরাং অলীর বেলায়েতের মর্যাদা যতই উচ্চাংগের হৌক তিনি কখনাে নবীদের মাকামাতের কোন কিছুতে পৌছতে পারবেন না । কেননা, অলী-হলেন অনুসরণকারী এবং নবী হলেন অনুসৃত। সুতরাং শাখা কখনাে তার মূলের সমকক্ষ বা নিকটবর্তী হওয়ার দাবী করতে পারেনা। 

যেহেতু মূল দ্বারাই শাখার গঠন ও অস্তিত্ব নির্ভরশীল এবং মূলই শাখার প্রত্যাবর্তন স্থল । যারা উক্ত মতের পরিপন্থী-মতের ধারণা পােষণ করে তারা মূলতঃ সত্যের পরিপন্থী মত পােষণকারী ।

একথা সত্য যে, অলীগণের যাবতীয় প্রকারের কারামত মূলতঃ আমাদের নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরই মুজিযা হিসেবে গণ্য। কেননা, সকল অলী তাঁরই অনুসরণকারী । আর অনুসারীদের সত্যতা মূলতঃ অনুসৃতের সত্যতারই দলীল । অলীর মর্যাদা নবীর মর্যদার নীচে একথার দলীল হিসেবে আল্লামা আবু ইয়াযীদের কথা উল্লেখ করা যায়।

 তিনি বলেন, আমাদের নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে মর্যাদা ও নিয়ামত লাভ করেছেন উহার উদাহরণ হলাে, যেমন মধুভর্তি একটি মটকা, যার থেকে এক ফোটা মধু টপকে পড়লাে। এ টপকে পড়া মধুর ফোটা সমস্ত অলীর মান-মর্যাদার সমষ্টির সমান। আর মটকায় বিদ্যমান সমুদয় মধু আমাদের নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মান মর্যাদার উদাহরণ ।

উলামায়ে মুহাককেকীন এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, অলী তার অলী হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে জ্ঞাত হতে পারেন কি না? এ সম্পর্কে উস্তাদ আবু আলী (রহঃ) বিষয়টির সম্ভাবনা ও বৈধতার মত ব্যক্ত করেছেন। আল্লামা কুশাইরী (রহঃ) বলেন, আমরাও উক্ত কথায় একমত। কিন্তু ইবনে।

ফোরাক ভিন্নমত পােষণ করেন। অলীদের মধ্যে যারা নিজের অলী হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে যান এটা তার কারামত হিসেবে গণ্য। তবে প্রত্যেক অলীর এ জ্ঞান লাভ হওয়া অত্যাবশ্যক নয়। আর প্রত্যেক অলীরমধ্যে কোন না কোন প্রকারের কারামত থাকে। বরং কোন অলীর দুনিয়ার জীবনে মলতঃ কোন কারামত না থাকলেও এটা তার অলী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা বা ত্রুটি সৃষ্টি করেনা ।

কারামত প্রকাশ হওয়ার বৈধতা ও সম্ভাবনার দলীল হলাে, হজরত সুলায়মান (আঃ) এর সংগীর কথা, আমি আপনার চোখের পলক ফিরাবার পর্বেই বিলকিসের সিংহাসন হাজির করতে পারি । জুমার দিন খােবার মধ্যে হজরত উমর (রাঃ) এর আহবান, হে সারিয়া (মুসলিম সেনাদল) পাহাড়, পাহাড়, অর্থাৎ পাহাড়ের দিকে লক্ষ্য কর, সেদিক থেকে শত্রুপক্ষ আসছে।

তার এ আহবান ঐ মুহূর্তেই মুসলিম সেনাদলের নিকট পৌছে যায় এবং তারা। পাহড়ের দিক থেকে শত্রু পক্ষ সম্পর্কে সাবধান হয়ে যায় অথচ তিনি ছিলেন মদীনা শরীফে এবং সেনা দল ছিল মিশরে ।

আল্লাহ পাকের বাণী-

الى خمر (3)

كلما دخل ليها زكريا المحراب وجد عندها رزقا       …অর্থাৎ যখনই হজরত যাকারিয়া (আঃ) বাইতুল মুকাদ্দাসের মেহরাবে হজরত মরিয়ামের নিকট প্রবেশ করতেন সেখানে তিনি ঐশী খাদ্য ফলফলাদি দেবতে পেতেন। 

আল্লাহপাকের বাণী

تري إليك بجذع النخلة تساقط علي طبا جنيا

. (مریم -۲۰)

অথচ মরিয়াম নবী ছিলেন না। এ ছাড়া আসহাবুল কাহফের ঘটনা,কুকুরের সাথে কথা বলা ইত্যাদি কারামত পবিত্র কুরআনের ভাষায় সাব্যস্ত ।

 আর যে বিষয়গুলাে কারামত হিসেবে বৈধ ও সিদ্ধ সেগুলাের উদাহরণ হলাে, যেমন এক মৌসুমের খাদ্য বা ফল অন্য মৌসুমে প্রকাশ করা, পিপাসার সময় পানির উপস্থিতি, অল্প সময়ে বিরাট দূরত্বের পথ অতিক্রম করা, নিজকে শত্রুর কবল হতে মুক্ত করা, গায়েবী আহবানকারীর আহবান শ্রবণ করা ইত্যাদি। 

তবে মাতা-পিতা ব্যতীত মানুষের জন্য, জড় পদার্থ জীবে পরিণত হওয়া ইত্যাদি বিষয় গুলাের মূলতঃ কারামত হিসেবে প্রকাশ হওয়া সঠিক ও সিদ্ধ নয়। দুনিয়ায় মহান আল্লাহকে স্বচক্ষে দর্শন করা ও তদ্রুপ সিদ্ধ ও বৈধ নয়। যেহেতু এ ব্যাপারে ইজমা প্রতিষ্ঠিত আছে যে, দুনিয়াতে আল্লাহ পাককে  স্বচক্ষে দর্শন করা কারাে সম্ভব নয়। 

এ ব্যাপারে ইবনে ফোরাকের দুটি মত পাওয়া যায়। একটি বৈধতার অন্যটি বৈধতার পরিপন্থী । বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে কারামতে আওলিয়া সাব্যস্ত আছে- সহীহ হাদীসে বর্ণিত, শৈশবে তিনজন ব্যতীত আর কেউ কথা বলেনি, (১)

হজরত ঈসা বিন মরিয়াম, (২) ঐ ব্যক্তি, যে জুরাইজ নামক ব্যক্তিকে দোষমুক্ত করে ছিল, (৩) আরেক জন বালক। হজরত ঈসা (আঃ) এর শৈশবে কথা বলার ঘটনা প্রসিদ্ধ ও সকলের জানা। জুরাইজ সম্পর্কে ঘটনা হলাে, তিনি ছিলেন রাহেব- সংসারত্যাগী আবেদ। তার প্রতি ব্যভিচারের সন্তান দ্বারা তােহমত দেয়া হয়। তখন মহান

কথা বলার শক্তি

আল্লাহ এ সন্তানকে কথা বলার শক্তি দেন। সন্তানটি বলতে লাগল, আমার  পিতা হলাে অমুক রাখাল । তখন জুরাইজ আবেদ ঐ সন্তান দ্বারা দোষমুক্ত হয়ে যান। আরেক বালক বলতে ঐ বালক, যে তার মায়ের কোলে দুধ পান একদা একজন সুন্দর যুবক ঐ মহিলার নিকট দিয়ে অতিক্রম করতে ছিল।

 তাকে দেখে মহিলা বলল, হে আল্লাহ! – আমার কোলের এ ছেলেটাকে এ যুবকের ন্যায় করে দাও। কোলের শিশু বলে উঠলাে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ঐ যুবকের ন্যায় করবেন না। কেননা, সে একজন অহংকারী ব্যক্তি। অতঃপর ঐ মহিলার নিকট দিয়ে আরেকজন মহিলা অতিক্রম করলাে । মানুষের নিকট আলােচিত যে, ঐ মহিলা ব্যভিচারীণী এবং চোর বটে। তখন মহিলা বলতে লাগলাে হে আল্লাহ! আপনি আমার ছেলেকে এ মহিলার (ব্যভিচারীণীর) ন্যায় করবেন না। 

কোলের শিশু বললাে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এ মহিলার ন্যায় করে দিন। কেননা সে মূলতঃ ব্যভিচারীণী ও চোর নয়। এ ছাড়া গুহার ঘটনা প্রসিদ্ধ যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিন জনের দোয়ায় খুলে যায়। এ ঘটনা প্রসিদ্ধ । কিন্তু দীর্ঘ হওয়ার কারণে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলাে না।  হযরত রাসূল পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঘটনাক্রমে।

এক ব্যক্তি গাভীর উপর বােঝা উঠায়ে পথ অতিক্রম করতে লাগলাে । তখন গাভী তার দিকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল, আমি এ কাজের জন্য সৃষ্টি হয়নি, আমি দুধ দেয়ার জন্য সৃষ্ট হয়েছি। এ শুনে মানুষেরা বলতে লাগলাে, সুবহানাল্লাহ! হযরত রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এ ঘটনা বিশ্বাস করলাম, হজরত আব বকর (রাঃ) ও হজরত উমর (রাঃ) এ ঘটনা শুনে তারাও এ ঘটনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন, 

হাদীসখানি বিশুদ্ধ সহীহ। হজরত ওয়াইফ আল-কারণী (রহঃ) এর হাদীস এবং হজরত উমর তাঁর অবস্থা ও ঘটনা সম্পর্কে যা লক্ষ্য করেছেন প্রভৃতি ঘটনাসমূহ

والله ولي التوفيق وذلك فضل الله يؤتيه من يشاء الله و الفضل العظي

 

Leave a Reply