রােমানদের পরাজয়ের কারণ

0
238

রােমানদের পরাজয়ের কারণ

ইয়ারমুকের যুদ্ধে উভয় পক্ষের সৈন্য সংখ্যার উল্লেখ উপরে করা হয়েছে; মৃতদের সংখ্যাও দেখান হয়েছে। ২,৪০,০০০ রােমক সৈন্যের বিরুদ্ধে মাত্র ৪৬,০০০ আরব সৈন্য যুদ্ধ করে জয়লাভ করল। এত বড় অসম যুদ্ধেও রােমানদের দুই লক্ষ মৃত্যু বরণ করল; পক্ষান্তরে মুসলমানদের মৃত্যু সংখ্যা ছিল

মাত্র ৩,০০০। হিসাব করলে দেখা যাবে। মুসলমান ও রােমক সৈন্যের অনুপাত ছিল ১:৫ এবং মৃত্যুর অনুপাত ছিল ১:৫০। অন্য কথায় প্রত্যেক মুসলমান গড়ে পাঁচজন শত্রুর সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং ৫ জন করে মেরেছে। রােমকদের সেনাবাহিনীতে প্রায় ৬০,০০০ সিরিয়ান আরব সৈন্য ছিল। তা সত্ত্বেও কেন তাদের এমন শােচনীয় পরাজয় ঘটল এই প্রশ্ন স্বভাবতই পাঠকের মনে জাগতে পারে। এর কারণ অবশ্যই ছিল। ২, ৪০,০০০ সৈন্যের মধ্যে অনেকেই ছিল দুবৃত্ত কয়েদী। তাদেরকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রণক্ষেত্রে পাঠান হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যাতে তারা পালিয়ে না যায়, অথবা যাতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে পারে এই উদ্দেশ্যে তাদের পায়ে পায়ে শিকল বাঁধা ছিল। তা থেকে বুঝা

যায়, দেশ ও জাতির প্রতি তাদের কোন মমত্ববােধ ছিল না। অন্যান্য খ্রীস্টান সৈন্যদের মধ্যেও ধর্ম বিরােধ ছিল, কাজেই তাদের মধ্যে ঐক্য শৃঙ্খলা ও নৈতিক মনােবল ছিল না। রােমান শাসকদের অত্যাচার, অনাচার দেশবাসীর অন্তরকেও আগে থেকেই তিক্ত ও বিষাক্ত করে রেখেছিল। রােমান পাদ্রী-পুরােহিত ও সাধু সন্নাসিরা তাই যখন ঘটা করে বড় বড় ক্রুশচিহ্ন অঙ্কিত নিশান দুলিয়ে ‘খ্রীস্ট ধর্ম বিপন্ন, প্রাণপণে যুদ্ধ কর’ এই আবেদন জানিয়েছিলেন, তখন তাদের মনে ধর্মভাব অপেক্ষা বিরক্তি ও অশ্রদ্ধার ভাবই বেশি জাগাচ্ছিল। সত্য বটে’ রােমনি। সেনাদলের সিরিয়ার আরব বুেঈনরাও ছিল, কিন্তু তারা খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত হলেও প্রাণ দিয়ে সে ধর্মকে কোন দিন গ্রহণ করতে পারে নি। কারণ, অন্যান্য খ্রীস্টানের । চোখে তারা চিরদিন ঘৃণা ও অবজ্ঞাই পেয়ে এসেছে। রােমান শাসনের অধীনে এসে তাই তারা দারুণ অস্বস্তি ও অসুবিধা বােধ করেছিল।  আরব বেদুঈনদের সাথে তাদের রক্তের টান থাকায় মনে মনে তারা মুসলমানদের বিজয় কামনাই করছিল ।

Leave a Reply