সালাম করার সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলী

2
805
সালাম করার সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলী
সালাম করার সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলী

1সালাম করার সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলী

সালামের ৩৪টি বিভিন্ন ধরণের সুন্নাত ও নিয়মাবলী

১) সালামের উত্তম শব্দাবলী হচ্ছে (আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগৃফিরাতুহ)। অর্থাৎ: তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহআযযা ওয়া জাল্লার পক্ষ থেকে এবং রহমত ও বরকতসমূহ আর ক্ষমাও।

২) সালামের উত্তর দেয়ার উত্তম শব্দাবলী হচ্ছে -(ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু)। অর্থাৎ: তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লার পক্ষ থেকে এবং রহমত ও বরকতসমূহ এবং ক্ষমাও ।

৩) যখন কোন ইসলামী ভাইয়ের সাথে সাক্ষাত করতে হয়, তবে তাকে সালাম করা সুন্নাত।

৪) যেসব ইসলামী ভাইকে আমরা চিনিনা, তাদেরকেও সালাম করা চাই।

৫) সালামকারীর উপর ৯০টি রহমত, আর উত্তরদাতার উপর ১০টি রহমত নাযিল হয় । (মিয়া-ই-সা’আদত)

সালাম করার সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলী

৬) সালাম এতোটুকু উঁচু স্বরে করবেন যেনো যাকে সালাম করছেন সে শুনতে পায় ।

৭) সালামের তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দেয়া ওয়াজিব। যদি বিনা কারণে বিলম্ব করে তবে সে গুনাহগার হবে। আর শুধু জবাব দিলে গুনাহ মাফ হবেনা। তাওবাও করতে হবে। (দুররে মুখতার।)

৮) উত্তর এতটুকু উচ্চস্বরে দেয়া ওয়াজিব যেনো সালামদাতা শুনে নেয়।

আজকল দুর্ভাগ্যবশতঃ আওয়াজ সহকারে সালামের জবাব খুব কম লোকেই দিয়ে থাকে। শুধু হাত কিংবা মাথা নেড়ে দিলে যথেষ্ট নয়,এমনকি মনে মনে জবাব দিয়ে দিলেও যথেষ্ঠ নয়।

৯) অমুসলিমকে সালাম করবেনা । সে যদি সালাম দেয় তবে তার উত্তর দেয়া ওয়াজিব নয়। উত্তরে শুধু ওয়া আলাইকুম’ ()বলে

দেবেন।

১০) হাতের আঙ্গুল দিয়ে সালাম করা ইঙ্গীদের এবং হাতের তালু দিয়ে সালাম করা খৃষ্টানদের প্রথা। (তিরমিযী)

১১) যদি সালাম ও উত্তরের শব্দাবলী মুখে উচ্চারণ) করে। আর সাথে সাথে। হাতে কিংবা মুখে ইশারা করে, তবে কোন ক্ষতি নেই। (আহকামে শরীয়ত) ।

১২) সালাম করার সময় রুকুর সীমা পর্যন্ত (এতেটুকু ঝুঁকে যাওয়া যেন হাত বাড়ালে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যায় ) ঝুকে যাওয়া হারাম। আর যদি এর চেয়ে কম ঝুঁকে তবে মাকরুহ। (বাহারে শরীয়ত)

দুর্ভাগ্যবশতঃ আজকাল সাধারণতঃ সালাম করার সময় লোকেরা ঝুঁকে যায়। অবশ্য, কোন বুযুর্গের হাত চুম্বন করার সময় ক্ষেত্রে ক্ষতি নেই, বরং সাওয়াব। বস্তুতঃ এটাতো ঝুঁকে করা ছাড়া সম্ভবপর নয়। এখানে তো প্রয়োজন আছে। অথচ সালাম করার সময় ঝুঁকে পড়ার প্রয়োজন নেই।

১৩) সরকারে মদীনা (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম)-এর পবিত্র স্বভাব হচ্ছে প্রথমে সালাম করা। এমনকি ছোটদেরকেও প্রথমে সালাম বলতেন।

১৪) সরকারে মদীনা (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম-এর আলীশান ফরমাম হচ্ছে- আরোহী পথচারীকে সালাম করবে, পথচারী উপবিষ্টকে, অল্পসংখ্যক লোক বেশী সংখ্যক লোককে এবং ছোট বড়কে সালাম করবে। (বোখারী ও মুসলিম)

সালামের ৩৪টি বিভিন্ন ধরণের সুন্নাত ও নিয়মাবলী

১৫) পেছনের দিক থেকে আগমনকারী সম্মুখস্থ লোককে সালাম করবে। (আলমগীরী)

১৬) বৃদ্দার সালামের জবাব উচ্চস্বরে দেবে, আর যুবতী নারীর সালামের জবাব এতোই নিম্নস্বরে দেবে যেনো, সে না শুনে। অবশ্য, এতটুকু আওয়াজ করা আবশ্যক যাতে জবাবদাতা নিজে শুনতে পায়।

১৭) আদাব আর’ বলে দিলে সালামের সুন্নাত পালন হবেনা।

১৮) এসেও সালাম করবে, যাবার সময়ও (সালাম বলবে)। যাবার সময় ‘খোদা হাফেয’ বলতে চাইলে বলবে, কিন্তু তাও বলবে সালামের পর।

১৯) যদি কিছু লোক জড়ো হয়ে থাকে। একজন এসে (আস্সালামু আলাইকুম) বললো, তখন কোন একজন উত্তর দিয়ে দিলে। যথেষ্ঠ হয়ে যাবে। যদি একজনও জবাব দিলোনা, তবে সবাই গুনাহগার।

২০) মদীনার তাজদার (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম )-এর খুশবুদার এরশাদ হচ্ছে- যে ব্যক্তি সালামের পূর্বেই কথা আরম্ভ করে দেয়, তার কথার জবাব দিওনা, যতক্ষণ না সে প্রথমে সালাম করে (কথা পুনরায় শুরু করে)। (কীমিয়া-ই-সা’আদত)

২১) ইসলামী বোনেরাও পরস্পর সাক্ষাত করলে সালাম করবেন। তাদের জন্য সালাম মাফ নেই।

২২) দু’জন ইসলামী ভাই যাচ্ছে। পথিমধ্যে কোন গাছ কিংবা দেয়াল ইত্যাদি মাঝখানে অন্তরাল হলো। তারপর যখনই সাক্ষাত হয় তখন সালাম করবে।

২৩) যদি চিঠিতে সালাম লিখে, তবে তার জবাব অবশ্যই দেবে। চিঠির সালামের জবাব দেয়াও ওয়াজিব। অথবা জবাবী চিঠিতে সালামের জবাব লিখে পাঠাবে।

২৪) যদি কেউ বলে, “অমুখকে আমার সালাম বলিও।” তখন আপনি তখনই নিজে জবাব দেবেন না। আপনার জবাব দেয়ার কোন অর্থই হতে পারেনা, বরং যার প্রতি সালাম পৌছানোর কথা বলা হয়েছে, তাকে বলবেন, “অমুক আপনাকে সালাম বলেছে।” অন্যের নিকট সালাম পৌছানো তখনই ওয়াজিব হয়ে যাবে, যখন আপনি হাঁ’ বলে দেন।

২৫) সাধারণতঃ আশেকৃগণ হাজীগণের নিকট দরখাস্ত করেন, “মদীনেওয়ালে আকৃা (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম)-এর মহান দরবারে আমাদের সালাম আরয করবেন।” হাজী সাহেবান। হাঁ’ বলে ফেললেন। এমতাবস্থায় এ সালাম পৌছানােও ওয়াজিব। না পৌছালে গুনাহগার হবেন।

সালাম করার সুন্নাতসমূহ ও নিয়মাবলী

২৬) যদি কেউ আপনাকে বলে,“অমুক আপনাকে সালাম বলেছে। যদিসালাম আনয়নকারী ও প্রেরণকারী উভয়ই পুরুষ হয়, তবে এভাবে বলবে, “. (আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম)। আর যদি উভয়ে নারী হয়, তবে

(আলাইকি ওয়া আলাইহিস্ সালাম) বলবেন। আর যদি আনয়নকারী পুরুষ এবং প্রেরক নারী হয়, তবে বলবেন, (আলাইকা ওয়া আলাইহাস সালাম)। যদি আনয়নকারী নারী আর প্রেরক পুরুষ হয়, তবে (আলাইকি ওয়া আলাইহিস সালাম) বলবেন। (এ সব কটির অনুবাদ হবে – তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং তার উপরও।’)

২৭) আপনি মসজিদে প্রবেশ করলেন, ইসলামী ভাই ক্বোরআন মজীদ। তেলাওয়াত ও যিকর করছেন, দুরদ পড়ায় রত আছেন, কিংবা নামাযের অপেক্ষায় বসে আছেন, এমতাবস্থায় তাদেরকে সালাম বলবেন না ।এটা সালামের সময় নয়। তাদের উপর জবাব দেয়াও ওয়াজিব নয়।(আলমগীরী)

২৮) কোন ইসলামী ভাই শিক্ষাদান কিংবা শিক্ষার বিষয় নিয়ে আলােচনা করছেন, অথবা সবক পর্যালােচনা করছেন, তাহলে তাদেরকে সালামকরবেন না।

২৯) ইজতিমায় বয়ান চলছে। ইসলামী ভাইয়েরা শুনছেন। আগমনকারী সালাম করবেন না।

৩০) যে ব্যক্তি যিকর ও দুরদ পাঠে মশগুল, কিছু না কিছু ওযীফা পাঠে রত আছেন, না’ত শরীফ পড়ছেন, দো’আ-প্রার্থনা করছেন- তাকেও সালাম করবেন না।

৩১) যে ব্যক্তি প্রস্রাব কিংবা পায়খানা করছে, কিংবা প্রস্রাব করার পর ঢিলা-কুলুক ব্যবহার করছে, প্রস্রাব শুকোনাের জন্য টহল দিচ্ছে, গােসলখানায় উলঙ্গ হয়ে গােসল করছে, গান গাইছে, কবুতর ওড়াচ্ছে কিংবা খানা খাচ্ছে- এসব অবস্থায় তাদেরকে সালাম করবেন না।

৩২) যেসব অবস্থায় সালাম করা নিষিদ্ধ, যদি কেউ করেও বসে, তবে তাদের উপর জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়।

৩৩) আহাররত ব্যক্তিকে সালাম করে বসলাে, তবে তখন মুখে লােক্‌মা না থাকলে জবাব দিয়ে দেবেন।

৩৪) ভিখারীর সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব নয়; (যখন ভিক্ষা চাওয়ার উদ্দেশ্যে আসে)।

হে আমাদের প্রিয় আল্লাহ! (আযযা ওয়া জাল্লা) আমাদেরকে সালামের বরকতসমূহ দ্বারা ধন্য করুন। আমীন বিজাহিন্নাবিয়্যিল আমীন। (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ।)

Bangla Islamic Blog

2 COMMENTS

Leave a Reply